গাছ থেকে সংগ্রহ করা মেহেদি পাতা থেকে গুড়া মেহেদি তৈরী করবেন যেভাবে ‘অর্গানিক মেহেদী বানানোর নিয়ম’
ভুমিকা
আমাদের কাছে অনেক বোন জানতে চায় কীভাবে মেহেদি পাতার গুঁড়া করতে হয়। আজকের পোস্ট সেই বোনদের উদ্দেশ্যে করা । তাহলে আর দেরি কেন চলুন দেখে নেই কিভাবে মেহেদি পাতা থেকে গুড়া মেহেদি তৈরী করবেন এবং তা সংরক্ষন করবেন।
মেহেদি পাতা থেকে বীট বা গুড়া করা খুব কঠিন কাজ হয়। যাইহোক, আপনি যদি বিচক্ষণতার সাথে কাজ করেন তবে আপনি সহজেই বাজারের কেনা মেহেদির ক্ষতিকারক পদাথ্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং গাছের পাাতা আপনি সংরক্ষণ করতে পারেন এবং মেহেদি বাড়িতেই তৈরী করতে পারেন।
আর যখন খুশি আপনার তৈরীকৃত গুড়া মেহেদি থেকে অর্গানিক মেদি তৈরী করে ব্যবহার করতে পারেন।
গাছ থেকে মেহেদি পাতা সংগ্রহ করুন এবং ভালো করে ধুয়ে নেন। যারা ঢাকায় থাকেন তারা পাতা কিনে নিতে পারেন। তারপর একটি পাত্রে ছড়িয়ে দিন।
আপনি চাইলে একটি কাপড়ে বিছিয়ে দিতে পারেন। তবে ভালোভাবে ছড়িয়ে দিন। ২-৩ দিন ভালো করে রোদে দিন। ২-৩ দিন রোদে রাখলে পাতা সম্পূর্ণ কুঁচকে যাবে।
আর না হলে চুলার হালকা তাপে তাওয়া বা কড়াইয়ে সামান্য নাড়ুন। তারপর দেখবেন এটা পুরোপুরি আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে, চাপ দিলে ভেঙ্গে যাবে।
এবার ব্লেন্ডারে রেখে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। সম্পূর্ণ ধুলো না হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করতে থাকুন। একবার মিশ্রিত হয়ে গেলে, আমাদের মেহেদি প্রস্তুত। এইভাবে আপনি এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন।
নিচে আএই বিষয়ে বিস্তারিত ধাপে ধাপে আলোচনা করেছি ও ভিডিও টিউটুরিয়াল দিয়েছি আপনি সেগুলো থেকে আরও ভালো ধারনা পাবেন।
গুড়া মেহেদি তৈরীর নিয়ম
১। প্রথমে মেহেদি গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করুন এবং পাতা গুলো থেকে ভাল ভাবে ডাল ছাড়িয়ে নিন। নিচের ছবি দেখুন।
২। এই পাতা গুলো প্রখর রোদে ২ থেকে ৩ দিন ভালো ভাবে শুকিয়ে নিন। যাতে পাতা গুলো মুড়মুড়ে হয়ে যায় এবং সহজে গুড়া করা যায়। নিচের ছবিতে দেখুন শুকানোর পর কেমন হবে।
রোদে শুকানো ব্যবস্থা না থাকলে আপনি চাইলে চুলার হালকা তাপে রেখেও শুকিয়ে নিতে পারেন তবে রোদে শুকিয়ে নেওয়াই উত্তম।
৩। এবার একটি ব্লেন্ডার নিয়ে পাতা গুলো ভালো ভাবে গুড়া করে নিন। খেয়াল রাখবেন যাতে ময়দার মত মিহি গুড়া হয়ে যায়। ব্লেন্ডারের ব্যবস্থা না থাকলে শীল বাড়ায় করেও আপনি গুড়া করে নিতে পারেন।
৪। এবার এই গুড়া গুলো একটি ছাকনির সাহায্যে ভালো ভাবে ছেকে নিন। যাতে গুড়ায় কোন খিজ না থাকে। তৈরী হয়ে গেল আপনার অর্গানিক গুড়া মেহেদি। নিচের ছবি দেখুন।
৫। এবার এই গুড়া মেহেদি অনেক দিন সংরক্ষন করতে এক প্লাস্টিকের কৌটা বা বোতল ব্যবহার করতে পারেন। এমন কৌটা বা বোতল ব্যবহার করতে হবে যাতে হাওয়া বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। হাওয়া বাতাস প্রবেশ করলে গুড়ার গুনগত মান নষ্ট হবে।
গুঁড়ো মেহেদি ব্যবহারের নিয়ম
প্রথমে একটি পাত্রে ২ চামচ গুঁড়ো মেহেদি নিন। রং গাঢ় করতে চাইলে এতে সামান্য চিনি মেশাতে পারেন। এবার এতে ১ টেবিল চামচ পানি দিন। একটি চামচ দিয়ে ধীরে ধীরে মেশান এবং মিশ্রন তৈরী করুন। পানি কম হলে প্রয়োজন মতো পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
এই পেস্টটি একটি শক্ত কাগজের টুকর দিয়ে একটি মেহেন্দির টিউব তৈরি করে নিন। এবার পেস্টটি আস্তে আস্তে টিউবে ঢুকান। ব্যস তেরী দেখলেন কত সহজে মেহেদি বানানো হয়েছে। তবে পানির পরিবর্তে গোলাপজলও ব্যবহার করতে পারেন।
এই গুঁড়ো মেহেদি ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে আমরা বিস্তারিত একটি পোস্ট ও ভিডিও টিউটুরিয়াল আসছে। সেভাবে আমরা আরও কিছু তথ্য শেয়ার করব।
বাড়িতে অবশ্যই চেষ্টা করুন। আর ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
মেহেদি পাতা থেকে গুড়া মেহেদি তৈরীর নিয়ম ভিডিও টিউটুরিয়াল
মেহেদি (Lawsonia inermis, মেহেদী বা মেহেন্দী অথবা মেন্দি যে নামেই ডাকি। ইংরেজিতে হেনা, যা আরবি হিন্না حِنَّاء থেকে এসেছে) এক ধরনের সপুষ্পক উদ্ভিদ, যার পাতা প্রাচীনকাল থেকে ত্বক, চুল, নখ, পশুর চামড়া ও পশম রং পরিবর্তন করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এই গাছটি খুব সম্ভব মেষপালকদের দ্বারা প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল যারা পশু পালন করত । মেহেদী গাছের রং বা দাগের বৈশিষ্ট্য গুলি সনাক্ত করা হয়েছিল যখন গবাদি পশুরা পাতা খেয়েছিল। গাছটি পশুরা খাওয়ার পর তাদের মুখ লাল হয়েছিল। এবং রাখালদের আঘাতের কারনে হয়েছিল কি না তার জন্য পরীক্ষা করতে প্ররোচিত করে। এছাড়াও যেসব দেশে গ্রীষ্মকালে গরম বেশি থাকে সেখানে মেহেদি শরীর ঠান্ডা করার জন্য মেহেদি পেষ্ট ব্যবহার করা হত।
আমাদের কথা
সাধারণত মেহেদি পাতা হাত, পা ও চুল রাঙাতে ব্যবহার করা হয়। ঈদ, বিয়ে, শাদী ইত্যাদি উপলক্ষে মেয়েদের সাজতে মেহেন্দি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া চুল ও দাড়ি রাঙানোর জন্য মেহেদি পাতার ব্যবহার অনেক বেশি। আজকাল বাজারে মেহেন্দি পাতাও পাওয়া যায়। যেহেতু গাছ খুব বড় হয় না, অনেক বাড়ির আঙিনায় ও ছাদে মেহেন্দি গাছ লাগানো হয়। মেহেন্দি শুধু রং করার জন্যই নয় অনেক রোগ নিরাময় করে। অন্য দিকে বা বাজারের কেনা মেহেদিতে রয়েছে ক্ষতিকারক পদাথ্য।